Logo

অর্থনীতি    >>   উন্নয়ন কাজের ধীরগতিতে শিল্পের সংকট, কাঁচামাল আমদানি ও রাজস্ব আদায়ে

উন্নয়ন কাজের ধীরগতিতে শিল্পের সংকট, কাঁচামাল আমদানি ও রাজস্ব আদায়ে

উন্নয়ন কাজের ধীরগতিতে শিল্পের সংকট, কাঁচামাল আমদানি ও রাজস্ব আদায়ে

দেশের অন্যতম রাজস্ব উৎস চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৪,৪২১ কোটি টাকা পিছিয়ে আছে। এই সময়ের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩৪,৯৭ কোটি টাকা, কিন্তু সংগৃহীত হয়েছে ২৯,৬৭৬ কোটি টাকা। একক মাস হিসাবে নভেম্বরে ৭,৪৫৭ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র ৫,২২৩ কোটি টাকা। যদিও গত বছরের তুলনায় এ সময়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।

কাস্টমস হাউজের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, নভেম্বরে গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫,৮০০ কনটেইনার কম পণ্য এসেছে, যা রাজস্ব আদায়ে প্রভাব ফেলেছে।

শিল্পখাতে কাঁচামালের আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। নভেম্বর মাসে ৭ লাখ ৬৪ হাজার মেট্রিক টন কাঁচামাল কম আমদানি হয়েছে। ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হাকিম আলী বলেছেন, “বাজারে চাহিদা কম থাকায় উৎপাদন কমছে, যার ফলে কাঁচামাল আমদানিও হ্রাস পেয়েছে।”

গত ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের পর হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার উন্নয়ন কাজে স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে কিছু ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টদের অনুপস্থিতি এবং আর্থিক বিশৃঙ্খলার কারণে উন্নয়ন কার্যক্রমে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে শিল্পখাতে, বিশেষ করে নির্মাণ ও উৎপাদন শিল্পে।

বাজারের চাহিদা কমায় শিল্পকারখানাগুলো উৎপাদন সীমিত করেছে। এর ফলে কাঁচামালের চাহিদা এবং আমদানিও কমে গেছে। উন্নয়ন কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করতে না পারলে এই সংকট দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।

জাতীয় আয়ের একটি বড় অংশ আসে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ থেকে। বছরে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সংগৃহীত হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬১,৩৫০ কোটি টাকা এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৮,৮৬৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছিল এই সংস্থা। চলতি অর্থবছরে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৩,৪৩২ কোটি টাকা।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, রাজস্ব আদায়ের বর্তমান সংকট কাটাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। নতুন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া এবং শিল্পের উৎপাদন বাড়ানো ছাড়া কাস্টমসের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কঠিন হবে।

১. উন্নয়ন কাজ ত্বরান্বিত করা: সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়িয়ে প্রকল্পগুলোর গতি বাড়ানো প্রয়োজন।
২. কাঁচামাল আমদানি সহজ করা: আমদানি প্রক্রিয়া সহজ করতে নীতিমালার সংস্কার ও বন্দর ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন প্রয়োজন।
৩. ব্যবসায়ীদের সহায়তা প্রদান: শিল্প উৎপাদন বাড়াতে সহজ শর্তে ঋণ এবং নীতিগত সুবিধা দেওয়া যেতে পারে।
৪. বাজার চাহিদা বৃদ্ধির উদ্যোগ: স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের চাহিদা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিতে হবে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের উন্নয়ন কেবল রাজস্ব সংগ্রহেই নয়, দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। এই সংকট নিরসনে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া না হলে দেশের শিল্প খাত ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে।